ঢাকায় বিমানবন্দরের কাছে গো’পন কা’রাগার, উঠে এল ভ’য়াল তথ্য

গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে বাতাসের জন্য তিনি দরজার নিচের ফাঁকা জায়গায় মুখ রেখে বসে থাকতেন। তার ভাষায়, ‘আমি ঘন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছিলাম, হারিয়ে যাচ্ছিলাম, এটি শুধু মৃ’ত্যু নয়, এর থেকেও ভ’য়াবহ কিছু ছিল।’
এটি ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত ছিল, যেখানে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পাই গ্লাস দিয়ে প্রতিটি কোণ পর্যবেক্ষণ করা হতো। একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, সেখানে প্রায় ৩০ বন্দী থাকতেন এবং সবাইকে চোখ বেঁ’ধে রাখা হতো।
মীর আহমাদ ছাড়াও এসব কা’রাগারে আরও অনেক নির্দোষ নাগরিক ছিলেন। আতিকুর রহমান রাসেল নামের এক তরুণ প্রকৌশলী, ২০২৩ সালে পুরান ঢাকার একটি মসজিদ থেকে অ’পহৃত হন। তার চোখও বেঁধে রাখা হয়, নাম বা পরিচয় বললেই মার খেতে হতো। তার ভাষায়, ‘তারা আমাকে বলে, তুমি একটা সংখ্যা মাত্র, নাম বলার দরকার নেই।’
তার বর্ণনায় দেখা যায়, তাকে দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, মা’রধ’র করা হয় এবং প্রতিদিন ভাবতেন আজ হয়তো তার শেষ দিন।
অন্যদিকে, ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ নামে এক তরুণ বলেন, তাকে এত ছোট একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল যে তিনি দাঁড়াতে পারতেন না। শোয়া তো দূরের কথা, বসতেও পারতেন না। টয়লেট বলতে ছিল একটি খোলা ড্রেন। তিনি বলেন,‘ওরা আমার জীবন থেকে একটা বছর কেড়ে নিয়েছে। আমি এখনো ঘুমের মধ্যে জেগে উঠি-চোখে কালো কাপড় বাঁধা সেই অন্ধকার স্মৃতি আমাকে তাড়া করে।’
এই জে’লখানার অবস্থান ছিল ঢাকার সেনানিবাস এলাকার ঠিক গা ঘেঁষে, যেখানে একটি গোপন ভবনে এই কর্মকাণ্ড চলত। জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের কাজ চালানো হতো রাষ্ট্রীয় শ’ত্রু সন্দেহে, কিংবা কেবল ক্ষ’মতাসীন দলের বিরোধিতা করার জন্য।
২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই গোপন জেল ব’ন্ধ হয়ে যায় এবং বন্দীদের ধীরে ধীরে মুক্তি দেয়া হয়। তার পরেই দেশবাসীর সামনে উঠে আসে এই ভ’য়ং’কর বাস্তবতা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সারা দেশে এমন প্রায় ৭০০টি গো’পন সেল থাকতে পারে যেখানে একইভাবে নি’র্যাতন চালানো হয়েছে। ত’দন্তকারীরা বলছেন, এসব কাজ সরাসরি তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন কিনা, সেটিও এখন প্রশ্নের মুখে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আ’ইনজীবী তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এসবের ত’দন্ত শুরু করেছে। তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১২২টি গ্রে’প্তারি প’রোয়ানা জারি করা হয়েছে, কিন্তু কাউকে এখনও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।
ভুক্তভোগীরা চাচ্ছেন, রাষ্ট্র যেন এই অন্যায়ের বিচার করে এবং এমন ভয়ানক অমানবিক ঘ’টনা আর যেন না ঘটে। মীর আহমাদ বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক প্র’তিশোধ নয়, এটা মানুষের অধিকার ও সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াই।’