রোটা ভাইরাস টিকার দাম কত | রোটা ভাইরাস টিকা কখন দিতে হয় | Rotavirus vaccine age

রোটাভাইরাস শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম গুরুতর কারণ। বিশেষ করে শীতকালে শিশুরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে ভ্যাকসিনের দুই থেকে তিন ডোজ দিলে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সংক্রমিত হওয়ার আগে শিশুদের অবশ্যই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন রয়েছে। অনেকেই ইন্টারনেটে রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিনের দাম জানতে চান। যেহেতু এটি একটি ভ্যাকসিন, এটি তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়বহুল। বর্তমান বাজারে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম দুই হাজার টাকার বেশি হতে পারে। আজকের পোস্টে আমি এই ভ্যাকসিনের দামের পাশাপাশি এই ভাইদের সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানাবো।

রোটা ভাইরাসের টিকার দাম কত


রোটা ভাইরাস টিকার দাম কত | রোটা ভাইরাস টিকা কখন দিতে হয় | Rotavirus vaccine age

ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করার জন্য রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে দুই ধরনের রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। রোটা প্রতিরোধের জন্য দুই ধরনের রোটা রিক্স এবং রোটা টেক ভ্যাকসিন রয়েছে। অনেকেই ইন্টারনেটে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনের খরচ খোঁজেন।

প্রতিটি শিশুর এই ভ্যাকসিনের দুই থেকে তিন ডোজ প্রয়োজন। আপনি বাজারে একক ডোজ আকারে ভ্যাকসিন কিনতে পারেন। হেলকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানির তৈরি রোটা টেক ভ্যাকসিনের দাম 2134 টাকা। প্রতিটি ডোজ1.5 মিলিগ্রাম রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন রয়েছে।

বাজারে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেই


রোটারিক্স শিশুদের ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী টিকা । কিন্তু গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন( জিএসকে) বাংলাদেশ ছাড়ার পর দেশের বাজারে এই রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় । এরপর থেকেই সংকট দেখা দেয় । বর্তমানে এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে ।

GSK চলে যাওয়ার পর, Rotarix বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা আরেকটি ভ্যাকসিন দেশীয় ওষুধ কোম্পানি হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাজারজাত করে । রোটাটেক নামের এই ভ্যাকসিন আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে হেলথ কেয়ারের । কিন্তু কোম্পানিটি চীনে বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন রপ্তানি করায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে । ফলে দেশে রোটারিক্সের পর রোটাটেক সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেই।

রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিসিন প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন," রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ফার্মাসিউটিক্যালস নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে । দ্রুত বাজারে ডেলিভারি করা যাবে ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ হালিমুজ্জামান বলেন, আমেরিকার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমরা রোটাটেক ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারি । কিন্তু চার বছর ধরে মার্কিন কোম্পানি রোটাটেক ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ভ্যাকসিন। 2023 সালের আগে তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না ।

কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে । ইন্টারন্যাশনাল ডায়রিয়া রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ( আইসিডিডিআরবি) অনুযায়ী, গত মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে । এই রোগীদের মধ্যে ২০ শতাংশ শিশু ।

রোটা ভাইরাস টিকা কখন দিতে হয়


রোটাভাইরাস থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি শিশুকে দুই থেকে তিন ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয় । তবে শিশুর জন্মের ৬ সপ্তাহের আগে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না । পরবর্তী ডোজ প্রথম ডোজের 4 সপ্তাহ পরে নেওয়া উচিত । তবে শিশুর বয়স ৬ মাস হওয়ার আগেই টিকার ডোজ শেষ করতে হবে ।

রোটা ভাইরাস টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া


আইসিডিডিআরবি( আন্তর্জাতিক আন্ত্রিক রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) ইনচার্জ এবং ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের প্রধান চিকিত্সক । প্রদীপ কে. বর্ধন বলেন, রোটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া হলে দুর্বল হয়ে পড়ে । এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । যাইহোক, বর্তমানে রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে । তিনি বলেন, ভ্যাকসিনটি আটলান্টার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র দ্বারা অনুমোদিত । এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ।

শীতে শিশুর ডায়রিয়া রোধে রোটা ভ্যাকসিন


সংক্রামক ভাইরাস' রোটা' শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী । তবে এই ভাইরাস থেকে শিশুকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি ভ্যাকসিন রয়েছে । রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের দুই বা তিন ডোজ শিশুদের নিরাপদ রাখতে পারে ।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল । আর দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে ।

ঢাকার উত্তরায় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, রোটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া হলে দুর্বল হয়ে পড়ে । এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । যাইহোক, বর্তমানে রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে । তিনি বলেন, রোটা প্রতিরোধে হাসপাতালে রোটা রিক্স ও রোটা টেক নামে দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে । যেকোনো ভ্যাকসিন শিশুকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে । রোটা টেক তিন মাত্রায় নিতে হবে । রোটা রিক্স দুই মাত্রায় নিতে হবে ।

চিকিৎসক রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় । তিনি বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ ব্যাকটেরিয়া । আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় । এটি মুখ দিয়ে শিশুর পেটে প্রবেশ করে । প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রোটা খুব দুর্বল নাও হতে পারে । প্রাপ্তবয়স্কদের রোটাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট ।

চিকিৎসক আরও বলেন, রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে শিশু কী খায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে । তিন বলেন, কিছু ধরার পর শিশুটি মুখে আঙুল দেয় কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । আর বাইরে থেকে কিনে আনা খাবার অবশ্যই বিশুদ্ধ ও খাওয়াতে হবে ।

ডাক্তাররা একমত যে মায়ের দুধ রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর । তিনি বলেন, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত যেসব শিশুকে একচেটিয়াভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে । আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না । এটি শিশুকে আরও দুর্বল এবং অরক্ষিত করে তোলে ।

চিকিৎসা কি?
কারণ রোটাভাইরাস একটি ভাইরাল রোগ, এটির চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না । কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে । রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখনও পাওয়া যায়নি । তাই ওরাল স্যালাইনই আসল হাতিয়ার । শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে । 6 মাসের বেশি বয়সী শিশুদের অন্যান্য খাবার দেওয়া উচিত । নরম চোয়াল, কাঁচা কলার ভর্তা, ডালের পানি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে । প্রতিটি মলত্যাগের পরে স্যালাইন দেওয়া উচিত । এটা মনে রাখা উচিত যে এই রোগের আসল ঝুঁকি হল ডিহাইড্রেশন ।

প্রতিরোধ
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই প্রধান প্রতিরোধ । প্রতিরোধ রোগের চিকিত্সার চেয়ে বেশী ভাল । ফুটানো পানি পান করা, টয়লেটে যাওয়ার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া, রাস্তার খোলা খাবার এড়িয়ে চলা, শিশুদের মুখে এসব বা ওটা দেওয়া থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি রোটাভাইরাস রোগের বিস্তার রোধ করবে ।

কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়
যদি কোনো শিশু রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে সংক্রমণের দিন থেকে অর্থাৎ লক্ষণ প্রকাশের আগেই শিশুর মলে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায় । কোনো কারণে যদি তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয় বা শিশুর হাতে- পায়ে মল থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে রোটাভাইরাস ছড়াতে পারে ।

রোটাভাইরাস ব্যাকটেরিয়া শিশুর হাত থেকে তার খেলনা, খাবার প্লেটে যে কোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে । অন্য কোন ব্যক্তি এটি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । তাই, টয়লেট করার পর ছোট- বড় সবার জন্য জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ । গ্রামীণ এলাকায় যেখানে এখনও শৌচাগার নেই, সেখানে এই রোগ ছড়ানোর হার অনেক বেশি । রোটাভাইরাস কারো জামাকাপড়, জুতা বা পায়ে শিশুর মলের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে ।

যাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায় । যাইহোক, যারা আক্রান্ত শিশুদের সাথে থাকেন, বিশেষ করে শিশুর বাবা- মা, ভাইবোন বা অন্যান্য আত্মীয় বা ডে কেয়ার কর্মী, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে ।

রোটাভাইরাস ডায়রিয়ার লক্ষণ
সাধারণত, একটি শিশু রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দুই দিন কোনো উপসর্গ দেখায় না । এই রোগ শুরু হয় জ্বর, বমি এবং তারপর পেটে ব্যথা । তারপর ধীরে ধীরে ডায়রিয়া শুরু হয় । এটি প্রায় 5 থেকে 7 দিন স্থায়ী হতে পারে । তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি তেমন গুরুতর নয় ।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
রোটাভাইরাস একটি অত্যন্ত মারাত্মক রোগ । এতে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে । তাই কিছু লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ।

রোগীর পানিশূন্যতা নির্দেশ করে এমন লক্ষণগুলি হল

উদ্বেগ, কান্নাকাটি কিন্তু জল না দেওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা শুষ্ক ডায়াপার, ক্লান্তি, শুষ্ক ঠোঁট, অতিরিক্ত ঘুম, শুষ্ক এবং ফ্যাকাশে ত্বক

রোটাভাইরাস ডায়রিয়ার জন্য ডাক্তাররা কীভাবে পরীক্ষা করেন
রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া সাধারণ ডায়রিয়ার চেয়ে বেশি গুরুতর এবং এর লক্ষণগুলিও খুব গুরুতর । তাই ডাক্তাররা সাধারণত উপসর্গ জেনে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন । তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য, আপনি শিকারের মল অনেকবার পরীক্ষা করতে পারেন ।

ডাঃ রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, দেশে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী প্রধান চারটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে রোটা ভাইরাস । রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানবদেহে প্রতিক্রিয়া শুরু হয় । বমি হচ্ছে আক্রান্তের প্রথম লক্ষণ । তারপর ধীরে ধীরে জলযুক্ত মল । ডায়রিয়া সে হয়ে যায়খুব অল্প সময়ের মধ্যে এবং ডিহাইড্রেশন এত গুরুতর যে সময়মতো চিকিত্সা না করা হলে তা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে । এ ছাড়া জ্বর ও পেটে ব্যথা হতে পারে । বমি এবং জ্বর 9 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে । ডায়রিয়া 21 দিন স্থায়ী হতে পারে ।

বাজারে নেই রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন রোটারিক্স


তনুশ্রী হালদার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা । তিন মাস বয়সী শিশুকে রোটাভাইরাস টিকা দেওয়ার জন্য শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বেড়াচ্ছে । কিন্তু টিকা দেওয়া হয়নি । শুধু তনুশ্রী নয়, তার মতো অনেকেই এই ভ্যাকসিন খুঁজছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না । চিকিৎসকরা বলছেন, এখন এই ভ্যাকসিন সংকট চলছে ।
তনুশ্রী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, টিকা দেওয়ার জন্য তিনি প্রথমে সন্তানকে নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে যান । ভ্যাকসিন নেই শুনে ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়েছিলাম । সেখানেও কোনো ভ্যাকসিন নেই । এরপর মিরপুর টিকা কেন্দ্র রাদ্দায় যেতে বলেন । সেখানে যাওয়ার পর দেখবেন এই ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই । কবে আসবেন তা বলতে পারেননি ।
লাজ ফার্মার পান্থপথ শাখার বিক্রয় সহযোগী মান্নান বলেন, রোটা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন নেই । খুব শীঘ্রই আসার সম্ভাবনা নেই । চিকিৎসকদের পরামর্শে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকলে তা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি ।

ল্যাবএইডের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান লেনিন বলেন,' রোটা ভাইরাসের রোটারিক্স ভ্যাকসিন শিশুদের দেওয়া হয়েছে । এটি Glaxo Smith Kline( GSK) দ্বারা সরবরাহ করা হয় । এই কোম্পানি বাংলাদেশে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে । বিকল্প কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না । স্বাস্থ্যসেবা একটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসার কথা থাকলেও তা এখনও আসেনি । যার কারণে বর্তমানে আমাদের কাছে রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন নেই । এই ভ্যাকসিন দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ ।

ন্যাশনাল ক্যান্সার হাসপাতাল ও গাইনোকোলজি ইনস্টিটিউটের ডাঃ রওশন জাহান রুনু বলেন, শুধু রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন নয়, সব ধরনের ভ্যাকসিনের বাজারে সংকট রয়েছে । এটা কেন করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না । এতে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা ।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. তাহমিনা ফেরদৌস বলেন,' রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে শিশুদের দুইবার দিতে হবে । এই টিকা না দিলে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় ।

বাজারে ভ্যাকসিন সরবরাহ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,' রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া হয় । এক্ষেত্রে রোটারিক্স দিতে হবে । এই টিকা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশ ঘটায় । দুইটা দিতে খুব ছোট । এটা একটা ওরাল ভ্যাকসিন ।'

তিনি বলেন,' জিএসকে পণ্য মানুষের কাছে পরিচিত ছিল । প্রত্যেকে তাদের পণ্যের নাম জানে তাই তারা তা খুঁজছে । এখন এই ভ্যাকসিন সংকট চলছে । অন্যান্য কোম্পানিও বিভিন্ন নামে এই ভ্যাকসিন বাজারজাত করে । এই পণ্যগুলি সমস্ত স্তরের চিকিত্সক দ্বারা ব্যবহৃত হয় না । এর বাজার খুব একটা বড় নয় । জিএসকে ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারে । তারা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য আমদানিকারকদেরও নিতে পারে । সানোফিরও সম্ভবত একটি পণ্য ছিল ।

বাংলাদেশে rotavirus টিকা মূল্য


হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির দ্বারা উদ্ভাবিত রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিনকে বলা হয় রোটাটেক । এই ভ্যাকসিনের দাম প্রতি ডোজ 2134 টাকা ।

রোটা ভাইরাসের টিকার নাম


রোটা ভাইরাস টিকার দাম কত | রোটা ভাইরাস টিকা কখন দিতে হয় | Rotavirus vaccine age

আমরা ইতিমধ্যে রোটা ভাইরাস সম্পর্কে জেনেছি । অনেকেই জানতে চান রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিনের নাম কি। বাংলাদেশে দুই ধরনের রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন পাওয়া যায় । যার নাম রোটা রিক্স এবং রোটা টেক ।

শিশুর শীতকালীন ডায়রিয়া প্রতিরোধে রোটা ভ্যাকসিন


ঢাকা শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’। তবে এই ভাইরাস থেকে শিশুকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি ভ্যাকসিন রয়েছে।

রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের দুই বা তিন ডোজ শিশুদের নিরাপদ রাখতে পার ।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল। আর দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

আইসিডিডিআরবি( আন্তর্জাতিক আন্ত্রিক রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) ইনচার্জ এবং ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের প্রধান চিকিত্সক। প্রদীপ কে. বর্ধন বাংলানিউজকে বলেন, রোটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া হলে দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যাইহোক, বর্তমানে রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে রোটা প্রতিরোধের জন্য রোটা রিক্স এবং রোটা টেক নামে দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে । যেকোনো ভ্যাকসিন শিশুকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে । রোটা টেকের দাম প্রতি ডোজ ১৬০০ টাকা, এটি তিন ডোজে নিতে হবে। প্রতি ডোজ রোটা রিক্স মূল্য 1800 টাকা । এটা দুইবার নিতে হবে।

তবে শিশুর জন্মের ৬ সপ্তাহের আগে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। পরবর্তী ডোজ প্রথম ডোজের 4 সপ্তাহ পরে নেওয়া উচিত। তবে শিশুর বয়স ৬ মাস হওয়ার আগেই টিকার ডোজ শেষ করতে হবে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনটি আটলান্টার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র দ্বারা অনুমোদিত। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

তবে, এটি ইপিআই( এক্সটেন্ডেড ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম) এর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ভ্যাকসিনের দাম এখনও বেশি, তিনি বলেছিলেন।

ডাঃ প্রদীপ কে. বর্ধন বলেন, শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।

তিনি বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় । এটি মুখ দিয়ে শিশুর পেটে প্রবেশ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রোটা খুব দুর্বল নাও হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের রোটাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট।

এই কারণে, শিশু কী খায় সে সম্পর্কে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত । কোনো কিছু ধরার পর লক্ষ্য করতে হবে মুখে আঙুল দেওয়া হচ্ছে কি না । আর বাইরে থেকে কিনে আনা খাবার অবশ্যই বিশুদ্ধ ও খাওয়াতে হবে ।

তিনি বলেন, মায়ের দুধ রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর। তিনি বলেন, যেসব শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি খুবই কম । আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না । এটি শিশুকে আরও দুর্বল এবং অরক্ষিত করে তোলে।

যেহেতু ছোট বাচ্চারা এই ভাইরাসে বেশি সংবেদনশীল, তাই সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত । আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের খরচ শেয়ার করেছি । আশা করি এতক্ষণে আপনি এই প্রশ্নের মাধ্যমে এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন । আজকের পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

Next Post Previous Post