বাংলা নববর্ষ রচনা | বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় | bengali new time essay in bengali

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের সাথে বাংলা নববর্ষের রচনা নিয়ে আলোচনা করব। কারণ বাংলা নববর্ষ লেখা বাঙালি জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা মাসের একমাত্র বৈশাখকে আমরা বাংলা নববর্ষ বলে থাকি। যা বাঙালি জাতির জীবনে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ নামে পরিচিত। আজ আমরা আপনাদের সাথে বিশেষভাবে বাংলা নববর্ষের রচনা উপস্থাপন করব। তাহলে শুরু করা যাক.

আমি প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের পোস্ট করে থাকি এইসব পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

ভূমিকা: বাঙালির জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ঐতিহ্যবাহী জীবনধারায় নতুন বছর নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উদ্যম। পুরানো দিনের গ্লানি মুছে হাসি, আনন্দ এবং গানের সাথে নতুন বছর ভুলে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির আনন্দ উৎসব হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় উৎসব।

বাংলা নববর্ষ রচনা | বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় | bengali new time essay in bengali

বঙ্গাব্দ বা বাংলা লিপির ইতিহাস: বঙ্গাব্দ বা বাংলা লিপির ইতিহাস রহস্যে ঘেরা। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, বাংলার সুলতান হোসেন শাহই বাংলা সন্তানের প্রবর্তক। কারো কারো মতে দিল্লির সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তার নির্দেশে আমীর ফতেহুল্লাহ সিরাজী হিজরী ও চান্দ্রবর্ষকে একত্রিত করে সৌরবর্ষ প্রবর্তন করেন। যাইহোক, সুলতান হোসেন শাহের সময় (৯০৩ হিজরি) বাঙালি পুত্রের প্রচলন থাকলেও, সম্রাট আকবরের (৯৬৩ হিজরি) সময় থেকে এটি সর্বভারতীয় হয়ে ওঠে। তখন থেকেই এটি বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলা সন আপামর বাঙালি জাতির অনন্য পরিভাষা।

নববর্ষ উৎসব: প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিরা নববর্ষ উদযাপন করে আসছে । তখন বাংলার গ্রামীণ কৃষক সমাজ এই উৎসবের মূলে ছিল। যে সময়ে অগ্রহায়ণ মাস থেকে বছর শুরু হয়। এটি ফসল কাটার সময় ছিল। সরকারের রাজস্ব ও ঋণ আদায়ের এটাই উপযুক্ত সময়। পরবর্তীতে বঙ্গাব্দ বা বাংলা পঞ্জিকা চালু হলে বৈশাখ মাস থেকে বছর শুরু হয় । আর বাঙালিরা পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে । বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনে এসেছে নতুন মাত্রা । বর্তমানে আমাদের দেশে নববর্ষ উদযাপিত হয় ।

পহেলা বৈশাখ: বিগত দিনের সব দুঃখ মুছে, অনাগত সব হিসাব মিটিয়ে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ আসে । বাংলা নববর্ষ । ধুমধাম করে নতুন বছর শুরু হয় । রবীন্দ্রনাথের এই গানটি সবাই গায়

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ,
তাপস শ্বাস ছাড়ুন এবং হাসুন ।
বছরের আবর্জনা চলে যাক ।

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা । এটি একটি সর্বজনীন উৎসব । এই মেলা জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনমেলা । সমসাময়িক গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিচিতি ফুটে ওঠে এই মেলায় । বাউল, মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগানে মেলার পরিবেশ ভরে ওঠে । মেলায় যাত্রা, নাটক, পুতুল নাচ, সার্কাস, নাগরদোলা ইত্যাদি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে । মেলায় মাটির হাঁড়ি, বাটি, পুতুল পাওয়া যায়; বেত ও বাঁশের গৃহস্থালি, তালের পাখা, বিভিন্ন কুটির পণ্য, শিশুদের খেলনা, মহিলাদের অলংকার ইত্যাদি ছাড়াও বৈশাখী মেলায় রয়েছে চিড়া, মুড়ি, খই, বাতাসা প্রভৃতি নানা ধরনের মিষ্টি । বৈশাখী মেলা ছাড়াও বাংলা নববর্ষের আরেকটি আকর্ষণ হালখাতা । এদিন গ্রাম, শহর ও শহরের ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো হিসাব শেষ করে নতুন হিসাব খোলেন । এ উপলক্ষে তারা নতুন- পুরনো ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ান । প্রাচীনকাল থেকে, এই অনুষ্ঠানটি এখনও জাঁকজমকের সাথে পালিত হচ্ছে ।


নববর্ষের প্রভাব: বাঙালির জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে । এদিন সারাদেশে সরকারি ছুটি থাকে । পারিবারিক বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয় । বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয় । সব কিছুতেই আছে আনন্দের ছোঁয়া । আধুনিক রীতি অনুযায়ী, ছোট- বড় সবাই নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করে । অতীতের লাভ- ক্ষতি ভুলে সবাই এই দিনে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখে । নতুন বছর আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয় ।

নববর্ষের তাৎপর্য: বাংলা নববর্ষ উৎসব নির্মল আনন্দের উৎস । জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে আজ আমাদের জাতীয় উৎসব । নববর্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের প্রাণবন্ত ও কল্যাণময় রূপ খুঁজে পাই । আমাদের ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক চেতনার সাক্ষী । আমাদের নববর্ষ উদযাপনে আনন্দের প্রাচুর্য রয়েছে, কিন্তু তা কখনই সংযম অতিক্রম করে না । বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির জন্য সারা বছর আনন্দের বাহক ।

উপসংহার: বাংলা নববর্ষ বাঙালিকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায় । পুরনোকে ভুলে নতুনকে আলিঙ্গন করার প্রেরণা দেয় । নতুন বছর পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসে, আমাদের জীবনে নতুন চেতনা জাগায় । আমাদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে জাতীয় জীবনে আত্মচেতনার বিকাশে উৎসাহিত করে । প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি বাংলা নববর্ষের এই চেতনাকে নিরন্তর লালন করে আসছে । তাই বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে অনেক আনন্দের ও গৌরবের ।

বাংলা নববর্ষ রচনা| বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয়| bengali new time essay in bengali


বাংলা নববর্ষ রচনা | বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় | bengali new time essay in bengali

ভূমিকা


পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন । এটি আমাদের কাছে নববর্ষ নামে পরিচিত । কারও নতুন বছর আমাদের কাছে আরও বেশি এবং সম্মিলিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্বের সেরা নববর্ষের ঐতিহ্য । নববর্ষে আমরা আগের বছরের সমাপ্তি এবং নতুন বছরের আগমনের মুখোমুখি হই । যে বছর প্রাকৃতিক মঞ্চ থেকে বিদায় নিল, একদিকে তার সুখ- দুঃখ, অন্যদিকে কোটি কোটি স্মৃতির প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে প্রকৃতির মঞ্চে যে বছর আবির্ভূত হল, তার কল্পনা কিন্তু অনিশ্চিত সম্ভাবনা একটি নির্দিষ্ট আকারে বিদ্যমান ।

বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় গণমুখী, সর্বজনীন উৎসব । এই দিনে অতীতের সব দুঃখ ভুলে নতুনের ডাকে সাড়া দেই । তারা জানে এই নতুন অনিশ্চয়তা নিশ্চিত সম্ভাবনায় পূর্ণ । তাই মন সুস্থ হয়, অস্থির হয়, নতুনকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয় । আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় বাংলার সব মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন বাজার, মাঠ, ঘাট, শহর- নগর । সাফল্য ও সমৃদ্ধির আলোকে নানা আনন্দ উৎসবে বৈশাখী মেলা উদযাপন করে সর্বস্তরের মানুষ ।

দেশে নতুন বছর


বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে নববর্ষ উদযাপন করে । বাংলা, ইরানি, চাইনিজ, জাপানিজ, ইংরেজি এবং ফার্সি । সবাই তাদের নিজস্ব নববর্ষ উদযাপন করে । খ্রিস্টান বিশ্বে নববর্ষ পালিত হয় ১ জানুয়ারি । তার প্রভাব আমাদের দেশের উচ্চবিত্ত সমাজে । ধর্মীয়ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বে নববর্ষ আসে রোমের আশুরা থেকে । ইরানি নববর্ষ নও রোজ, ইহুদি নববর্ষ রাজ হাসান এবং ভিয়েতনামের নববর্ষ তেত । যে নামেই এটি উদযাপন করা হোক না কেন, নববর্ষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্নাতক, আনন্দ এবং আনন্দের উদযাপন ।

নববর্ষের উজ্জ্বল সকালও বয়ে আনে আনন্দ, সম্মেলনের চেতনা বাঙালির জীবনে । বাংলার নববর্ষ উৎসব আমরা নানাভাবে উদযাপন করি । আমি চাই পুরানো দিনের ক্লান্ত দিন শেষ হতে পারে । ভিন্ন জীবন আসুক, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন প্রত্যাশা নিয়ে । আমি আশা করি হতাশা ও নৈরাজ্য থেকে মুক্তি, মনের কালোতা এবং হৃদয়ের দুঃখ থেকে মুক্তি । কবির কণ্ঠে উচ্চারিত কথাগুলো যেন প্রতিটি বাঙালির প্রাণে মুখর হয়ে ওঠে ।

নিশি আবসান, সেই বুড়ো
বছর শেষ
এই জরাজীর্ণ জীবনের ধুলোয় আমি আজ
আমি প্রণাম করলাম
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেউ রং
আজিকার মত ক্ষমা করুন
পুরনো বছরের সাথে
পুরনো অপরাধ ।

পহেলা বৈশাখ

আরো পড়ুন:  তোতা পাখির দাম কত

পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন । এই দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয় । এটি একটি বাঙালি সর্বজনীন লোক উৎসব । এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশে । নববর্ষ সমৃদ্ধি ও নতুন জীবনের প্রতীক । অতীতের ভুল ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় পালিত হয় বাংলার নববর্ষ । বাংলা নববর্ষ উদযাপন মূলত আকবরের সময় থেকেই শুরু হয় । সেই থেকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত মুঘলরা পহেলা বৈশাখ পালন করত ।

নববর্ষের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য


বাংলা নববর্ষ আমাদের পরিচয় ও জাতিসত্তা বহন করে । জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে নববর্ষ আমাদের জাতীয় উৎসব । নববর্ষ উদযাপনে আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির চেতনার সাক্ষী থাকি, এই উৎসবটি আবিষ্কার করি । নববর্ষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা খুঁজে পাই আমাদের জীনা বন্দী ও কল্যাণকর ধর্মীয় রূপ । নতুন বছরকে স্বাগত জানানো মানে আমাদের জীবনকে নতুনভাবে দেখার জন্য প্রস্তুত হওয়া । আমাদের নববর্ষ উৎসব নির্মল আনন্দের এক উচ্চ স্রোত । এখানে আনন্দের একটি বিস্তৃতি রয়েছে যা কখনও পরিমাপের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে না । বিদেশে নববর্ষ উদযাপনে প্রতি বছর প্রচুর প্রাণ হারায় । আনন্দের আয়োজন হয়ে ওঠে দুঃখের সংঘাত ।

নববর্ষ ও বৈশাখী মেলাঃ

আরো পড়ুন:  10000+ ঈদের ক্যাপশন

সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক মেলা । বৈশাখী মেলা নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে । ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনমেলা এই মেলা । মেলা শব্দের অভিধানে অর্থ প্রাচুর্য । আমাদের কুটির শিল্প জাত এমন কোনো পণ্য নেই যা বৈশাখী মেলায় দেখা যায় না । অনেক কিছুর এত বিশাল সমাবেশ হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে মেলা । মেলা খুবই উৎসবমুখর । এই মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, লোকশিল্প, কুটির শিল্প, সব ধরনের হস্তশিল্প ও নৃত্যশিল্প পাওয়া যায় । এছাড়া বৈশাখী মেলায় শিশুদের খেলনা, মহিলাদের সাজসজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্য সামগ্রী যেমন চিড়া, মুড়ি, খই, বাতাসা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয় ।

বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনের বৈশিষ্ট্য


পহেলা বৈশাখের দিনে বাংলার মানুষ অতীতের সুখ- দুঃখ ভুলে নতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে ওঠে । জানে নতুন অনিশ্চয়তা কিছু সম্ভাবনায় পূর্ণ । তাই মন অস্থির হয়ে ওঠে । নতুন গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয় । আর ওই দিন কাজ সেরে ঘর ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় । আটপৌরে জামাকাপড় ফেলে পুরোনো কাপড় পরিস্কার করে বন্ধু- বান্ধব ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে খাওয়া দাওয়া করেন । আমরা রমনা গাছের নিচে জড়ো হই এবং গান গাই এবং হাততালি দিই । সবাই মিলে উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠে দেশ । এছাড়াও স্থানীয় বেশ কিছু অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয় । যেমন মেঘ থেকে জল ভিক্ষা করা, বার্ষিক মেলা, পূর্ণ হো, হালখাতা ইত্যাদি ।

নগর জীবনে নববর্ষ উদযাপন

আরো পড়ুন: 32000 facebook vip account copy

বর্তমানে শহুরে সংস্কৃতির আদলে নতুন বছর উদযাপন করা হয় । পহেলা বৈশাখের ভোরে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ উৎসব । এ সময় নতুন সূর্যের সাক্ষী হয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নগরবাসীর বাগানে বা মানুষের আনাগোনায় জড়ো হয় শিল্পীরা এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা । সাধারণত সব বয়সী এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সব শ্রেণীর এই দিনে পরিধান করে । নববর্ষকে স্বাগত জানাতে যুবতীরা লাল- সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, মাথায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ, ছেলেরা পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরে । কেউ কেউ ধুতি ও পাঞ্জাবি পরেন । এই বাংলা নববর্ষের দিনে পান্তা ভাত একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে । এর সাথে পরিবেশন করা হয় ভাজা ইলিশ মাছ । এভাবে লুকিয়ে থাকা বার্ষিক কিছু আচার- অনুষ্ঠান পালন করে গ্রামীণ ঐতিহ্য অনেকটাই রক্ষা করা হচ্ছে ।

উপসংহার


নতুন বছর সকল মানুষের জন্য নতুন জীবন নিয়ে আসে । নতুন বছর যেন ধোনির বিলাসিতার সংকীর্ণ আনন্দে পরিণত না হয় । দারিদ্র- পীড়িত ও নিপীড়িতদের নিষ্ফল হাহাকারে বিশ্ব যেন দুঃখিত না হয় । শান্তির শুভ শক্তির দ্বারা বিশ্বের পসবোদের অত্যাচার পরাজিত হোক । আসুন পহেলা বৈশাখের আগে আমাদের মধ্যেকার সকল ভেদাভেদ ও দিদা দূর করার চেষ্টা করি । আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় চেতনায় জাগ্রত । আপনাকে আসতে অনুপ্রাণিত করতে পেরে আমরা গর্বিত । নতুন বছর আমাদের জীবনের সকল সুখ বয়ে আনুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা । আজ, নববর্ষের এই শুভ উপলক্ষ্যে, আসুন আমরা একসাথে যোগদান করি এবং বলি-

" যতক্ষণ দেহ থাকে আত্মায়,
আমি উদ্যমে পৃথিবীকে নিয়ে যাবো ।
আমি এই পৃথিবীকে একটি শিশুর বাসযোগ্য করে তুলব-
নবজাতকের প্রতি এটা আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ।

বাংলা নববর্ষ রচনা| বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয়| bengali new time essay in bengali


বাংলা নববর্ষ রচনা | বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় | bengali new time essay in bengali

ভূমিকা: পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন । সারা বছরের দুঃখ, বেদনা, ক্লান্তি ও হতাশা পেছনে ফেলে নতুন বছরের এই দিনটি যখন আমাদের দোরগোড়ায় আসে, তখন আমরা আনন্দে মেতে উঠি । এদিন গ্রামে গ্রামে মেলা বসে । লাঠি খেলা, ষাঁড়ের লড়াই, বল খেলা আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে ।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস: বিশ্বের প্রায় সব জাতিই তাদের নিজ নিজ বছরের প্রথম দিন উদযাপন করে । এই ধরনের নববর্ষ উদযাপন প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে । এই নতুন বছর বা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানানোর ইতিহাস বিশ্বের প্রতিটি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত । প্রাচীন সভ্যতা যেমন মিশরীয়, ফিনিশিয়ান এবং ইরানিরা তাদের নববর্ষ উদযাপন করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে এবং তাদের আগে, গ্রীক ও রোমানরা যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে পঞ্চম শতাব্দী থেকে এমন একটি উৎসব পালন করত । প্রাচীন আরবরা' ওকাজ' মেলা উদযাপন করত, ইরানীরা' নওরোজ' উৎসব পালন করত এবং প্রাচীন ভারতীয়রা' দোল' পূর্ণিমার দিনে নববর্ষ উদযাপন করত ।

নববর্ষ উদযাপনের তাৎপর্য: বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে নববর্ষ উদযাপনের সময়গত মতভেদ ও ভিন্নতা যাই থাকুক না কেন এই বিশেষ দিনের আনন্দ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই । নববর্ষ উদযাপনের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে এর মধ্যে যে মানুষ চিরকাল পুরনোকে ধুয়ে নতুনের স্বপ্ন দেখে । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাই নববর্ষের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন-

এসো হে বৈশাখ
চলো চলো

নববর্ষ উদযাপন বাংলা নববর্ষ: 16 শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রবর্তিত হয় । বাংলাদেশ তখন মুঘল সম্রাটের একটি উপনদী রাষ্ট্র । খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাড়িওয়ালারা বছরের এই মৌসুমের প্রথম দিনে অর্থাৎ বৈশাখের প্রথম দিনে খাজনা আদায় করতেন । জমিদারদের বৈঠকখানায়' পুণ্যাহ' বসত ।

হালখাতা: ব্যবসায় এক বছরের লেনদেনের লাভ- ক্ষতির হিসাব মেটানোর জন্য নতুন বছরের নতুন দিনে হালখাতা খোলার রীতি এখন নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।

বৈশাখী মেলা: পহেলা বৈশাখী দিনে ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে । এ মেলায় বিভিন্ন আকর্ষণীয় খেলনা, হাতিয়ার, মাটি, কাঠ, লোহার তৈরি খেলনা বিক্রির জন্য আনা হয়েছে । মুড়ি মুড়কি, তুষ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের খাবার, ফল ও সবজি বৈশাখী মেলাকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময় । গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশেও বৈশাখী লোকজ উৎসব পালিত হচ্ছে ।

বইমেলা প্রতি বছর: পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা হয় । পয়লা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ এই বইমেলা ।

আঞ্চলিক উৎসব: অঞ্চলভেদে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে । যেমন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চট্টগ্রাম শহরে বিখ্যাত' বালি খেলা'( কুন্তি প্রতিযোগিতা) অনুষ্ঠিত হয় । আব্দুল জব্বারের' বালি খেলা' নামে পরিচিত এই খেলাটি খুবই বিখ্যাত ।

উপসংহার: বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উদযাপন এদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য । নববর্ধ উদযাপনের মাধ্যমে আমরা নতুনকে আলিঙ্গন করতে, পুরাতনকে মুছে দিতে এবং এগিয়ে যেতে শিখি ।

বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় ও এর ইতিহাস


পহেলা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ( পহেলা বৈশাখ, বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস) হল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন । দিনটি সকল বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের দিন । দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয় । ত্রিপুরায় বসবাসকারী বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে । পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয় । তাই এটিকে বাঙালির সর্বজনীন লোকজ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।

বাংলা নববর্ষ কীভাবে উদযাপন করা হয়েছিল?


বাংলা নববর্ষ কীভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে এলো তা জানতে হলে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস জানতে হবে । পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে পালিত হয় । এই বাংলা বছর বা বাংলা বর্ষপঞ্জি কীভাবে এল? প্রথমত, প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা মাস সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসারে পালিত হয়ে আসছে । তারপরও আসাম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, বাংলা, পাঞ্জাব প্রভৃতি সংস্কৃতি বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন করে । তাহলে বাংলা নববর্ষের ইতিহাসে বারো মাস এলো কীভাবে? এবং কিভাবে দিন এবং সময় স্থির হয়? যদিও সম্রাট আকবরকে বাংলা বর্ণমালার প্রবর্তক হিসাবে ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়, তবে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভাবক আসলে সপ্তম শতাব্দীর রাজা শশাঙ্ক বলে বিশ্বাস করা হয় । পরবর্তীতে সম্রাট আকবর কর ও রাজস্ব আদায়ের জন্য এটি পরিবর্তন করেন । প্রথমে আকবরের ক্যালেন্ডারকে বলা হতো" তারিখ- ই- এলাহী" এবং সেই ক্যালেন্ডারের মাসগুলোকে বলা হতো আরবাদিন, কারদিন, বিসুয়া, তির । কিন্তু এই নামগুলো কবে পরিবর্তন করে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না । এটা বিশ্বাস করা হয় যে বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে । যেমন জয়াষ্ট থেকে জয়াষ্ট, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, আশ্বিন থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিকা, অগ্রহায়ণ থেকে অগ্রহায়ণ, পৌষ থেকে পৌষ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র ।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয় । এই দিনটি বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত হয় । পশ্চিমবঙ্গে, পহেলা বৈশাখ চন্দ্রসৌর বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে 15 এপ্রিল পালিত হয় । বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গেও দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয় । বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা দিনটিকে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করেন ।

এই উৎসবটি মিছিল, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উদযাপিত হয় । ঐতিহ্যবাহী বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা হল" শুভ নববর্ষ" । বাংলাদেশে নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় ।

বাংলা বর্ষপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো হিজরি সন নির্ধারণ করা হয় চাঁদ অনুযায়ী এবং খ্রিস্টীয় বছর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী । এই কারণে, সন্ধ্যার আকাশে নতুন চাঁদ দেখার পর হিজরি বছরে নতুন তারিখ শুরু হয় এবং খ্রিস্টীয় বছরে নতুন দিন শুরু হয় UTC ± 0000 এ । পহেলা বৈশাখ দুপুর ১২টার পরিবর্তে সূর্যোদয় থেকে শুরু হওয়ার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, যদিও সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার একটি ঐতিহ্য রয়েছে, বেঙ্গল একাডেমি ১৪০২ খ্রিস্টাব্দের ১লা বৈশাখ থেকে এই নিয়ম বাতিল করে । আর দুপুর ১২টায ় দিন গণনা শুরু হয় । আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে । করেছে

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিনে পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ও কাঁচা মরিচ ।

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস


বাংলার বারো মাস সৌর পঞ্জিকা অনুসারে অনেক আগে থেকেই পালিত হতো । গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে এই সৌর ক্যালেন্ডার শুরু হয় । সৌর বছরের প্রথম দিনটি আসাম, বাংলা, কেরালা, মণিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পালিত হয় । এখন যেহেতু নববর্ষ একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে যেটি একটি নতুন বছরের সূচনা উপলক্ষে উদযাপিত হয়, এটি একসময় ছিল না । এরপর নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ পালিত হতো আর্তব উৎসব ও ঋতু উৎসব হিসেবে । তখন এর প্রধান তাৎপর্য ছিল কৃষি, কারণ প্রযুক্তিগত প্রয়োগের বয়স পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর ওপর নির্ভর করতে হতো ।

তত্ত্বের উৎপত্তি মুঘলদের থেকে

কিছু ইতিহাসবিদ বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তির জন্য ৭ম শতাব্দীর রাজা শশাঙ্ককে দায়ী করেন । পরবর্তীকালে, মুঘল সম্রাট আকবর রাজস্ব বা কর আদায়ের উদ্দেশ্যে এটি সংশোধন করেন ।

সম্রাট আকবর কেন রাজস্ব সংগ্রহের জন্য একটি নতুন ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করেছিলেন?

আরো পড়ুন:  তোতা পাখির দাম কত

ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কৃষিপণ্যের ওপর কর আরোপ করতেন । কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলন মেলেনি । কৃষকরা সময়মতো খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন । মুঘল সম্রাট আকবর কর আদায়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য বেঙ্গল সনের প্রবর্তন করেন । তিনি প্রধানত প্রাচীন ক্যালেন্ডারে সংস্কারের নির্দেশ দেন । সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহুল্লাহ সিরাজী সৌর ক্যালেন্ডার ও আরবি হিজরি ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরি করেন । বাংলা বছর শুরু হয় ১০ই মার্চ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ বা ৯৯২ হিজরিতে । যাইহোক, এই গণনা পদ্ধতি আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় থেকে( ৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) কার্যকর করা হয়েছিল । শুরুতে এই বছরকে বলা হত ফসলি বর্ষ, পরে এটি “ বঙ্গাব্দ ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয় ।

আকবরের সময় থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় । তখন বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সকল কর, ফি ও শুল্ক দিতে বাধ্য ছিল । পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে জমির মালিকরা নিজ নিজ এলাকার বাসিন্দাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন । এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয় । উৎসবটি একটি সামাজিক ইভেন্টে পরিণত হয়েছে যা তার বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে । এ সময় দিনের মূল কর্মসূচি ছিল হালখাতার প্রস্তুতি । হালখাতা মানে নতুন হিসাব বই । প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানের হিসাব আপডেট করার প্রক্রিয়া । গ্রাম, শহর কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা, সবখানেই পুরনো বছরের বই বন্ধ করে নতুন বই খোলা হয় । হালখাতা দিবসে দোকানিরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে । এই প্রথা এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত, বিশেষ করে সোনার দোকানে ।

মুঘলদের উৎপত্তি

আরো পড়ুন:  10000+ ঈদের ক্যাপশন

শামসুজ্জামান খানের মতে, বাংলার মুঘল শাসক, মুর্শিদকুলি খান, সর্বপ্রথম পুণ্যাহ, যার অর্থ" উদযাপনের দিন" প্রথা শুরু করেছিলেন ।

এবং তিনি বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের জন্য আকবরের রাজস্ব নীতি ব্যবহার করেছিলেন ।

শামসুজ্জামান খান ও নীতীশ সেনগুপ্তের মতে বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি স্পষ্ট নয় । শামসুজ্জামানের মতে, “ এটিকে বাংলা সন বা সাল বলা হতো, যা যথাক্রমে আরবি ও ফারসি শব্দ ।

বঙ্গাব্দ( বাংলা সন) শব্দটিও আকবরের সময়ের কয়েকশ বছর আগে দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে আকবরের সময়ের আগে বাংলা ক্যালেন্ডারের অস্তিত্ব ছিল । এটা আকবর নাকি হোসেন শাহ গ্রহণ করেছিলেন তাও স্পষ্ট নয় । হুসেন শাহ আকবরের আগে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন । নীতীশ সেনগুপ্ত বলেন, যারাই ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষপঞ্জির ওপর ভিত্তি করে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেছেন, তা বসন্তের ফসলের পর রাজস্ব আদায়ের জন্য সহায়ক ছিল, কারণ ইসলামী হিজরি । শণের ক্ষেত্রে, রাজস্ব সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয় ।

বাঙালি ছেলের আসল নাম ছিল তারিখ- ই- এলাহী । মুঘল সম্রাট আকবর 1585 সালে তার 29তম রাজত্বের বছরের 10 বা 11 মার্চ একটি ডিক্রি জারি করে তারিখ- ই- এলাহী প্রবর্তন করেন । সিংহাসনে আরোহণের পরপরই তিনি একটি বৈজ্ঞানিক, কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য ক্যালেন্ডার এবং মাস প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন । সঠিকভাবে গণনা করা হবে । এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি তৎকালীন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমীর ফতুল্লা সিরাজীকে একটি নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির দায়িত্ব দেন । আবুল ফজল, বিখ্যাত পণ্ডিত এবং সম্রাট আকবরের মন্ত্রী, ব্যাখ্যা করেছিলেন যে হিজরি ক্যালেন্ডার কৃষির জন্য মোটেই উপযুক্ত ছিল না কারণ চান্দ্র বছরের 31 বছর সৌর বছরের 30 বছরের সমান । চান্দ্র বছরের উপর ভিত্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা হত, যখন কৃষিকাজ সৌর বছরের উপর নির্ভর করত । চান্দ্র বছর 354 দিন এবং সৌর বছর 365 বা 366 দিন । ফলস্বরূপ, দুটি ক্যালেন্ডারের মধ্যে ব্যবধান বছরে 11 বা 12 দিন । সম্রাট আকবরের রাজস্ব আদায়ের আধুনিকীকরণের প্রেক্ষাপটে বাংলা সনের জন্ম ।

তারিখ- ই- এলাহিরের বারো মাসের নাম ছিল কারবাদিন, আরদি, বিসুয়া, কোরদাদ, তির, আমরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, বাহাম এবং ইস্কান্দার মিজ । বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিকা, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্রের নামগুলি কখন এবং কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না । বাংলা মাসের নামকরণ করা হয় বারোটি তারার নামানুসারে । বিশাখ নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জয়াষ্ট থেকে জয়াষ্ট, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, আশ্বিন থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিকা, অগ্রহায়ণ থেকে অগ্রহায়ণ, পৌষ থেকে পৌষ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র ।

হিন্দু উৎপত্তি তত্ত্ব


ঐতিহাসিকদের মতে, পহেলা বৈশাখ উৎসব ঐতিহ্যবাহী হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত যা বৈশাখী এবং অন্যান্য নামে পরিচিত । ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে উৎসবটি পালিত হয় । এই বৈশাখীকেও বৈশাখী উচ্চারণ করা হয় । হিন্দু ও শিখরা এই উৎসব পালন করে ।

ভারতের পূর্ব এবং উত্তর- পূর্ব রাজ্যগুলির নববর্ষের উৎসবগুলি হিন্দু বিক্রম ক্যালেন্ডারের সাথে সম্পর্কিত । এই ক্যালেন্ডারটি বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে 57 খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে । ভারত ও নেপালের অনেক অংশের মতো, ভারতের গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায় বিক্রমাদিত্যকে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের কৃতিত্ব দেয় । কিন্তু এই অঞ্চলগুলির বিপরীতে, বাংলা যুগের সূচনা 57 খ্রিস্টপূর্বাব্দে নয়, 593 খ্রিস্টাব্দে, যা নির্দেশ করে যে বাংলা যুগের সূচনা তারিখ কোন এক সময়ে পরিবর্তিত হয়েছিল । শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই পরিবর্তন ঘটেছিল বলে মনে করা হয় ।

আধুনিক ইতিহাস

আধুনিক নববর্ষ উদযাপন প্রথম 1917 সালে রিপোর্ট করা হয়েছিল । সেই বছর পহেলা বৈশাখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করার জন্য হোমম কীর্তন এবং পূজার আয়োজন করা হয়েছিল । পরে, 1938 সালে, অনুরূপ কার্যকলাপের উল্লেখ করা হয়েছিল।

সমসাময়িক ব্যবহার


ভারতীয় রাজ্যগুলিতে ব্যবহৃত বাংলা ক্যালেন্ডারটি সংস্কৃত পাঠ সূর্য সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে । এখানে মাসগুলোর ঐতিহাসিক সংস্কৃত নাম রয়েছে, যার প্রথমটিকে বলা হয় বৈশাখ । তাদের ক্যালেন্ডারটি হিন্দু ক্যালেন্ডার পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত এবং বিভিন্ন বাঙালি হিন্দু উৎসবের দিনগুলি নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয় । পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যের বাঙালিদের জন্য প্রতি বছর 14 বা 15 এপ্রিল উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় ।

কিন্তু বাংলাদেশে 1966 সালে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি 1966 সালে পুরানো বাংলা ক্যালেন্ডার সংশোধন করে । এখানে প্রথম পাঁচ মাস 31 দিন এবং বাকি মাস 30 দিন নিয়ে গঠিত । প্রতি অধিবর্ষে, ফাল্গুন মাসে 31 দিন নির্দিষ্ট করা হয় । এই ক্যালেন্ডার বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় 1987 সালে । এরপর প্রতি বছর জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং নতুন বছর 14 এপ্রিল শুরু হয় । 1426 বাংলায় দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয় । বাংলা ক্যালেন্ডারের বিশেষ দিনগুলোকে টি- এর সঙ্গে মেলাতে বাংলা একাডেমি এই পরিবর্তন করেছে

পহেলা বৈশাখ উদযাপন

আরো পড়ুন: 32000 facebook vip account copy

বাংলাদেশের নববর্ষ


নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের সংস্কৃতি ও শিল্প ওতপ্রোতভাবে জড়িত । গ্রামবাসীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়িতে যায় । রুম পরিষ্কার এবং মোটামুটি ভাল সজ্জিত. বিশেষ খাবারও পাওয়া যায় । বেশ কয়েকটি গ্রামের মিলনমেলা এলাকায় খোলা মাঠে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় । মেলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের পণ্য বিপণন, বিভিন্ন পিঠা পুলির আয়োজন । অনেক জায়গায় ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত পরিবেশন করা হয় । এই দিনের একটি পুরানো ঐতিহ্য হল গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন । তাদের মধ্যে নৌকা দৌড়, লাঠি খেলা বা কুস্তি একসময় প্রচলিত ছিল । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই ধরনের কুস্তি প্রতিযোগিতা হয় ১২ বৈশাখে, চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে, যা জব্বারের বলির খেলা নামে পরিচিত ।

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মূল নিবন্ধ মঙ্গল শোভাযাত্রা

ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি অপরিহার্য অংশ হল মঙ্গল শোভাযাত্রা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয় । এই শোভাযাত্রা বাংলার গ্রামীণ জীবন ও পরিবেশকে তুলে ধরে । শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে । শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন রঙের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয় । 1989 সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ।

30 নভেম্বর, 2016 তারিখে, জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশের" মঙ্গল শোভাযাত্রা" কে অন্তর্ভুক্ত করে । 28 নভেম্বর থেকে 2 ডিসেম্বর, 2016 পর্যন্ত ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজের আন্তঃসরকারি কমিটি( আন্তঃসরকারি কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অফ ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ) বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে । বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুমোদন করে, ইউনেস্কো লিখেছে “ মঙ্গল শোভাযাত্রা হল 14 এপ্রিল পহেলা বৈশাখ( নববর্ষের দিন) পালিত একটি সর্বজনীন উৎসব, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র ও শিক্ষকদের দ্বারা আয়োজিত হয় । ঐতিহ্যটি 1989 সালে জীবিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল । সামরিক শাসনের অধীনে হতাশ ছাত্ররা একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সম্প্রদায়কে আশা দিতে চেয়েছিল । এটিতে মুখোশ এবং ভাসমান প্রতিকৃতি রয়েছে যা শক্তি, শান্তি এবং অগ্রগতির জন্য মন্দকে দূরে রাখে ।"

২০০৫- ০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং দায়িত্ব এশিয়াটিক সোসাইটির ওপর ন্যস্ত করা হয় । জরিপ প্রতিবেদনের 12 ও 11 খণ্ডে প্রকাশিত তালিকায় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । বাংলা একাডেমি 2014 সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রথম প্রস্তাবটি প্রণয়ন করে । কিন্তু তা মানা হয়নি । পরবর্তীকালে, ইউনেস্কোর দাবিগুলিকে মিটমাট করার জন্য প্রস্তাবটি পুনরায় কাজ করা হয়েছিল । 1 জুন, 2015- এ, প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইউনেস্কোতে এই সংশোধিত প্রস্তাবটি পুনরায় জমা দেন । এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবটি নমিনেশন ফাইল নং 01091( নোমিনেশন ফাইল নং 01091) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । পরবর্তীকালে, ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ।

ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানট নববর্ষ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রমনা পার্কে ঢোকার লাইনে নগরবাসী

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নববর্ষের সূর্যের আবাহন । পহেলা বৈশাখের সূর্যোদয়ের পর ছায়ানট শিল্পীরা নতুন বছরের সূচনা করতে একযোগে গান করে । ঢাকার রমনা পার্কের রমনা বটমূলে এই নববর্ষের গানের উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । জায়গাটিকে বটমূল বলা হলেও যে গাছের নিচে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার ছায়া বনাম গাছ নয়, অশ্বথ গাছ । ১৯৬০- এর দশকে পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সালে ছায়ানটের বার্ষিক উদযাপন শুরু হয় ।

বইমেলা

ঈশা খান সোনারগাঁও বউমেলা নামে একটি ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করেন, যা স্থানীয়ভাবে" বোতলের মেলা" নামেও পরিচিত । জয়রামপুর গ্রামের লোকজন জানায়, পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা প্রায় ১০০ বছর ধরে চলে পাঁচ দিন । মেলাটি একটি প্রাচীন বটগাছের নীচে অনুষ্ঠিত হয়, যদিও গোঁড়া ভক্তরা এখানে দেবী সিদ্ধেশ্বরীকে পূজা করতে জড়ো হন । বিশেষ করে কুমারী, কনে এমনকি মায়েরাও এই মেলায় আসেন তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় । ভক্তরা সন্দেশ- মিষ্টি- ধন দূর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফল নিবেদন করে । ছাগল কোরবানির প্রথাও পুরনো । বদলে যাচ্ছে পুরনো পুজোর পালা । এখন কাপোতি- কাপোতি ফুঁকিয়ে দেবীর কাছ থেকে শান্তির বার্তা পেতে চান ভক্তরা ।

হালখাতা


হালখাতা হল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আগের বছরের সব হিসাব চূড়ান্ত করে নতুন খাতা খোলার উৎসব । বাঙালি ব্যবসায়ী, দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা এটি পালন করেন ।

ঘোড়া মেলা


এছাড়া সোনারগাঁও থানার পেরাব গ্রামের কাছে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয় । একে ঘোড়ার মেলা বলা হয় । এই নববর্ষের দিনে একজন লোকসাহিত্যিক যামিনী সাধক ঘোড়ায় চড়ে এসে সবাইকে প্রসাদ দিতেন এবং তার মৃত্যুর পর ঘটনাস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয় । প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে সনাতন ভক্তরা স্মৃতিস্তম্ভে একটি মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয় । এ কারণে লোকজ মেলাকে ঘোড়ার মেলা বলা হয় । এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো নৌকায় খিচুড়ি রান্না করা হয় এবং কলা পাতায় সবাই আনন্দের সাথে খায় । সকাল থেকেই লোকজন আসতে শুরু করে । সকাল থেকেই মেলায় আসতে আগ্রহী শিশু- কিশোররা । দুপুরের পর শুরু হয় একদিনের এই মেলা । হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় । যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারণেই এই মেলার আয়োজন । তবে এ মেলায় সব ধর্মের মানুষেরই প্রাধান্য রয়েছে । এ মেলায় শিশু- কিশোরদের ব্যাপক ভিড় । মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও সার্কাসের আয়োজন করা হয় । পশ্চিম আকাশ যখন লাল আলোয় সজ্জিত, মানুষ যখন খুব ক্লান্ত, তখন এই মেলার ক্লান্তি দূর করতে কীর্তন যোগ হয় নতুন মাত্রায় । মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই কীর্তন । এভাবেই শেষ হয় ঐতিহ্যবাহী বৈশাখ মেলা ।

চট্টগ্রামে নববর্ষ উদযাপন


চট্টগ্রামের ডিসি হিল চত্বরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ উৎসবের মূল কেন্দ্র ডিসি হিল পার্ক । সামিলা সংস্কৃত জোতা দ্বারা আয়োজিত পুরানো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছর এখানে দুই দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও খোলা মঞ্চে রয়েছে বিভিন্ন গ্রামীণ পণ্যের প্রদর্শনী । পান্তা ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে ।

1973, 1974 এবং 1975 সালে চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের প্রচেষ্টায় ইস্পাহানি পাহাড়ের পাদদেশে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । 1978 সালে, প্রথমটির মতো, উত্সবটি বর্তমান ডিসি হিল পার্কে স্থানান্তরিত হয়েছিল । প্রাথমিকভাবে প্রতিটি সংগঠন থেকে দুজন সদস্য একটি স্কোয়াড গঠন করেন এবং সেই দল যৌথ সঙ্গীত পরিবেশন করে । আশির দশক থেকে সংগঠনগুলো আলাদাভাবে গান পরিবেশন শুরু করে । পরবর্তীতে গ্রুপ থিয়েটার সমন্বয় পরিষদ যুক্ত হওয়ার পর অনুষ্ঠানটিতে নাটক যুক্ত হয় ।

শহরের অন্যান্য নিয়মিত অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শিশু প্রতিষ্ঠান ফুলকির তিন দিনব্যাপী “ ছোটদার বৈশাখী উৎসব ” যা পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগে শুরু হয় এবং বৈশাখের প্রথম দিন সন্ধ্যায় শেষ হয় । এই অনুষ্ঠানটি 1990 সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।

নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বার্ষিক মেলার আয়োজন করা হয় । এছাড়াও, সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং বা সিআরবি- তে উন্মুক্ত মঞ্চ সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউট, বাদশা মিয়া রোড ক্যাম্পাস বার্ষিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু । আর এই অনুষ্ঠানে বাঙালি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে ।

পার্বত্য জেলায় আদিবাসীরা নববর্ষ উদযাপন করে


বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর আবাসস্থল যাদের প্রত্যেকে নববর্ষের দিনে একটি উৎসব করে । ত্রিপুরার বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমাদের বিজু উৎসব । বর্তমানে তিনটি দেশ একসঙ্গে এই উৎসব পালন করে । যোগফল

পশ্চিমবঙ্গ


পশ্চিমবঙ্গে, পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের সূচনা, খুব জাঁকজমকের সাথে পালিত হয় । বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে সারা পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয় । বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে জীবনকে একত্রিত করে সবাই মিলে নববর্ষকে বরণ করে নেয় । পুরো চৈত্র মাস জুড়ে চলতে থাকে নতুন বছরের প্রস্তুতি । চৈত্র মাসের শেষ দিনে অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহা বিষুব সংক্রান্তি, চড়ক পূজা অর্থাৎ গাজন উৎসব শিবের পূজা করার জন্য পালিত হয় । এই দিনে সূর্য মীন রাশি ছেড়ে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে । এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে চড়ক মেলার আয়োজন করা হয় । এই মেলায় অংশগ্রহণকারী ভিক্ষু বা ভক্তরা বিভিন্ন শারীরিক কসরত করে আরাধ্য দেবতাকে খুশি করার চেষ্টা করেন এবং সাধারণ মানুষকে আপ্যায়ন করেন ।

এছাড়া একবিংশ শতাব্দীতেও অনেক পরিবারে সম্পর্কের সব তিক্ততা ও তিক্ততা থেকে মুক্তি পেতে নববর্ষের দিনে টোক ও তিতা বানজান খাওয়ার প্রতীকী প্রথা চালু রয়েছে । পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে প্রত্যেক পরিবারে প্রবীণদের স্নান ও প্রণাম করার রীতি রয়েছে । বাড়িতে এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি পরিবেশন করা হয় । এই দিন থেকে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হালখাতা নামে তাদের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলে । এই উপলক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা করা হয় । নতুন খাতায় শুভ স্বস্তিকা আঁকা হয়েছে ।

পহেলা বৈশাখে গ্রামীণ এলাকায় এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা শুরু হয় । বৈশাখ মাসজুড়ে চলে এই মেলা । আগেকার দিনে জমির মালিকরা পহেলা বৈশাখে তাদের এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করতেন । পরবর্তীতে এই উৎসব একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় । আকবরের আমলে এই দিনে হালখাতা করা হতো । গ্রামে বা শহরে পুরনো বছরের বই বন্ধ করে নতুন বই খোলা হয় । হালখাতা দিবসে দোকানিরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে । সোনার দোকানে এই প্রথা এখনও বিদ্যমান । আধুনিক নববর্ষ উদযাপন প্রথম 1917 সালে রিপোর্ট করা হয়েছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করার জন্য সেই বছরের পাহলভি বৈশাখে হোমম কীর্তন এবং পূজার আয়োজন করা হয়েছিল ।

কলকাতা

আরো পড়ুন:  তোতা পাখির দাম কত

যদিও ভারত সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত, কলকাতা বছরের পর বছর ধরে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে । বাংলার এই নববর্ষের সূচনা উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন পাড়া- মহল্লা ও সংগঠনে আয়োজন করা হয়েছে প্রভাতফেরি । গত বছর চৈত্র মাসে, শহরের বেশিরভাগ দোকানে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যা' চৈত্র সেল' নামে পরিচিত । তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এবং এই ছাড়ের সুবিধা নিতে অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে কলকাতার সকল মানুষ এক মাসের জন্য নতুন জামা- কাপড় ইত্যাদি কিনছেন ।

বৈশাখের প্রথম দিনে, কলকাতার বিখ্যাত কালীঘাট মন্দিরে উল্লেখযোগ্য ভিড় দেখা যায় । সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ভোর থেকে গঙ্গা স্নানের জন্য অপেক্ষা করে দেবীকে পূজা দিতে এবং হালখাতা শুরু করার জন্য মন্ত্র পাঠ করে । ব্যবসায়ী ছাড়াও, অনেক গৃহস্থও তাদের পরিবারের মঙ্গল কামনা করে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে কালীঘাটে যান । এই দিনে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসেবে নতুন ধুতি- পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরার রীতি রয়েছে ।

অন্যান্য দেশে পহেলা বৈশাখ

আরো পড়ুন:  10000+ ঈদের ক্যাপশন

পহেলা বৈশাখ পালিত হয় বাংলাদেশ ও ভারত এবং অন্যান্য অনেক দেশে।

কানাডার বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অফ আলবার্টা অন্যান্য সংগঠনের সাথে তার ঐতিহ্য উৎসব (বাংলা নববর্ষ) জাঁকজমকের সাথে উদযাপন করেছে। ক্যালগারির বাঙালিরা ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাক এবং বাঙালি সংস্কৃতির সাথে দিনটি উদযাপন করে। অস্ট্রেলিয়ার বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলও সিডনি অলিম্পিক পার্কে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

আমি আশা করি যে আপনি পোস্ট পড়ে অনেক খুশি হয়েছে। আর আমরা আশা করি যে, আপনি যে বিষয় পড়তে চেয়েছেন সেই বিষয়টা অবশ্যই পেয়েছে। এরকম সকল তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে সবসময় প্রবেশ করবেন। আমাদের সাইডে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post